“The Suppressed History of Mahmudul Hasan contains all the undertones of a surreptitious thriller.”

Report by: Senior Editor & Correspondent
Tabligh News 365
Bangladesh
Gazi M.A. Sakil
দেশভাগের অনেক পরের ঘটনা। ততোদিনে “জমিয়তে উলামা” উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল। ভারত ও তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত থাকলেও এই ভূখণ্ডে সেই অনুযায়ী সংগঠনের কাজ বিস্তৃত ছিলো না।
ঐ সময়ে “জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম- (পাকিস্তান)”এর আমীর ছিলেন হাফেজে হাদীস আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ.। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে (১৯৬৯ সালে) হযরত দরখাস্তী রহ. বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সফরে আসেন। সফরকালীন সময়ে এদেশে তিনি জমিয়ত’এর একটি মারকাযের অভাববোধ করেন, যার ফলে সাংগঠনিক কাজগুলোতে ব্যাঘাত ঘটছে। তাই হযরত দরখাস্তী রহ. এমন একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা প্রকাশ করেন যেটা ইলম-আমলের পাশাপাশি যাবতীয় সাংগঠনিক কাজের জন্য এদেশে জমিয়তের মারকায হবে।
কিন্তু ততোদিনে হযরত দরখাস্তী রহ.-এর সফরের সময় একেবারেই শেষ প্রান্তে। একদিন পরেই ফ্লাইট, অথচ হযরত চাচ্ছিলেন এই বিষয়টির সুরাহা নিজে করে যেতে। তাই হযরতের আবেদন ছিলো, “আপনারা একখণ্ড জমির ব্যবস্থা করুন, আমি ইনশাআল্লাহ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়ে যাবো।”
আলহামদুলিল্লাহ সংশ্লিষ্ট উলামায়ে কেরামের দোয়া এবং মেহনতের ফলে এক রাতেই ঢাকার কুতুবখালী’তে জমির ব্যবস্থা হলো এবং সেইখানে মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেই হযরত দরখাস্তী রহ. নিজ দেশে ফিরে গেলেন।
মাদ্রাসার নাম নির্ধারণ করা হলো “জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া”। মাদ্রাসার শাইখুল হাদীসের পদ অলংকৃত করেন খ্যাতনামা হাদীস বিশারদ মাওলানা তাজাম্মুল আলী রহ. আর তারই সুযোগ্য শাগরেদ হযরত কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ.’কে প্রদান করা হয় জামিয়ার মুহতামিম’এর দায়িত্ব।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আট বছর কাজী সাহেব রহ. জামিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে দুঃখজনকভাবে তাকে নিজেরই এই প্রিয় জামিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়। সেটাও আবার জামিয়ার এমন এক শিক্ষকের জন্য, যিনি কাজী সাহেব রহ.-এর প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। অথচ সেই শিক্ষককে জামিয়ায় নিয়োগ দেওয়ার সময় শায়খ তাজাম্মুল আলী রহ. নিজে কাজী সাহেব রহ.-কে বলেছিলেন, “মাওলানা, মাদ্রাসার মধ্যে এই ফেতনাকে নিয়া আইসেন না।” কিন্তু তথাপি কাজী সাহেব রহ. সেই শিক্ষকের উপর আস্থা রাখেন এবং বিশেষ বিবেচনায় সেই মাওলানাকে মাদ্রাসায় নিয়োগ দেন। আফসোস! শেষ পর্যন্ত হযরত তাজাম্মুল আলী রহ.-এর আশংকাই সত্য প্রমাণিত হয় এবং সেই মাওলানা কর্তৃক নিজ উস্তাদের বিরুদ্ধে ন্যক্কারজনক ঘটানাটি সংগঠিত হয়।
কে ছিলেন সেই মাওলানা যাকে শায়খ তাজাম্মুল আলী রহ. “ফেতনা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন? আর তার কারণই বা কি ছিলো? সেটা জানতে না হয় একটু পিছে ফিরে দেখা যাক!!
“জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ” তখন দেশের প্রধানতম একটি দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা আতাহার আলী রহ. এর প্রতিষ্ঠিত উক্ত জামিয়া ছিলো এই ভূখণ্ডের দ্বীনী শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। হযরতের ইলমি ছায়ায় প্রস্ফুটিত হয়ে ইলম ও আমলের ময়দানে সৌরভ ছড়াচ্ছিলেন কতো শত-সহস্র ফুল।
অথচ দুঃখজনকভাবে “জয়নাল আবেদীন” নামক এই জামিয়ার’ই একজন ছাত্র হীন স্বার্থ চরিতার্থে শিক্ষক বিরোধী আন্দোলন শুরু করার চেষ্টা করে। ইতিপূর্বে সেই ছাত্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হীন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলো বিধায় শেষ পর্যন্ত হযরত আতাহার আলী রহ. তাকে জামিয়া থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেন। আর এই সবকিছুর রেশ ধরে (এটাও প্রচলিত যে, খোদ আতাহার আলী রহ. এর আবেদনের প্রেক্ষিতে) পরবর্তীতে দেশের অন্যান্য জামিয়াগুলোও সেই ছাত্রকে ভর্তি করা থেকে বিরত থাকে। ফলে নিজের এই ন্যক্কারজনক কর্মগূণে কোনো উপায়ন্তর না দেখে “জয়নাল আবেদীন” নিজের নামটাই পরিবর্তন করে ফেলেন এবং তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর নিজের পূর্ব কর্মকাণ্ডের দরুন “জয়নাল আবেদীন” দরস-তাদরীসে তেমন সুযোগ-সুবিধা করতে পারছিলেন না। এদিকে তিনি স্বীয় উস্তাদ “কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ.”এর সান্নিধ্যে যেতে থাকেন এবং নিজ কৃতকর্মের জন্য বারংবার অনুশোচনা প্রকাশ করতে থাকেন। ফলে কাজী সাহেব রহ. ছাত্রের উপর আস্থা রাখেন এবং কুতুবখালীতে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। আর ঐ সময়-ই কাজী সাহেব রহ.কে সাবধান করে মাওলানা তাজাম্মুল আলী রহ. বলেছিলেন, “মাওলানা, মাদ্রাসার মধ্যে এই ফেতনাকে নিয়া আইসেন না।” আর শেষ পর্যন্ত “জয়নাল আবেদীন” সম্পর্কে মাওলানা তাজাম্মুল আলী রহ.-এর আশংকাই সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং ছাত্র কর্তৃক স্বীয় উস্তাদ’কে উৎখাতের মতো এক ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। সেটাও আবার পবিত্র হজ্বের মৌসুমে, উস্তাদ যখন হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররমায় অবস্থান করছিলেন তখন।
বস্তুত ঘটনাটা এই ছিলো যে, পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে কাজী সাহেব রহ. তখন মক্কা মুকাররমায় অবস্থান করছিলেন। আর তখন “জয়নুল আবেদীন” সংবাদ পাঠিয়ে কাজী সাহেব রহ.কে একথা জানান যে, “হুজুর, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না। জনগণ সবাই আপনার উপর ক্ষেপে গেছে আর আমাকে জোর করে মুহতামিম বানিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আপনি আপাতত মাদ্রাসায় আইসেন না। পরিস্থিতি শান্ত হোক, আমিই আপনাকে পরবর্তীতে আবারো নিয়ে আসবো।” কিন্তু আফসোস! কাজী সাহেব রহ.এর ইন্তিকাল পর্যন্তও তথাকথিত সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আর শান্ত হলো না (!!) আর কাজী সাহেব রহ.-এরও নিজের প্রিয় জামিয়ায় ফিরে আসা হলো না।
“জয়নাল আবেদীন” কর্তৃক উস্তাদের আমানত আত্মসাৎ করার পর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। এরইমাঝে তিনি ক্ষমতাসীন মহলে নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরী করে নিয়েছেন। জ্বি ঠিকই পড়েছেন, তিনি নিজ ক্বওমী অঙ্গনের চাইতে ক্ষমতাসীনদের সাথে সবসময় সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে পছন্দ করতেন। ফলস্বরূপ মাদ্রাসার! বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে নিজ ঘরানার সাথীদের চাইতে ক্ষমতাসীন ও প্রশাসনের লোকেরাই অধিকাংশ তার দাওয়াতি মেহমান হিসেবে আমন্ত্রণ পেতো।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে, ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন নীতিমালার জন্য এদেশের উলামায়ে কেরাম রাজপথে পর্যন্ত নেমে এসেছেন, তখনও তাকে সুকৌশলে বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে দেখা যেতো। সহজ ভাষায় বললে, ইতিপূর্বে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ যতগুলো প্লাটফর্ম ছিলো সেগুলোর প্রায় কোথাও তাকে দেখা যায়নি! বরং সবসময়ই তিনি এসব থেকে একা-একা থেকেছেন।
এমনকি ২০১৩ সালে আল্লাহ ও রাসূল স. এর অবমাননার প্রতিবাদে “হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ”এর ব্যানারে সকল উলামায়ে কেরাম যখন একই পতাকাতলে “নাস্তিক্যবাদ বিরোধী আন্দোলন”এ যোগদান করলেন, তখনও তার আচরণ ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি আন্দোলনে নিজের সমর্থন জানাতে বাধ্য হন, কিন্তু ৫ই মের ঘটনার পর ঠিকই বিভিন্ন সময় আন্দোলন, আন্দোলনকারী ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে নিজের অসন্তোষ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান আর নিঃসন্দেহে সেটা সম্পূর্ণভাবেই ছিলো তার ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রিক। বিশেষত নরসিংদীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী “দারুল উলূম দত্তপাড়া” মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট পুরোনো যে কেউই জানে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের উপস্থিতিতে হেফাজতে ইসলাম ও দলীয় আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট সমালোচনার কথা।
আর বেফাক-হাইয়্যা কেন্দ্রিক তার অদ্ভুত আচরণও কম প্রশ্নের তৈরী করেনি। কেননা সবসময়ই বেফাক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও যখনই সরকার কর্তৃক সনদের স্বীকৃতির সম্ভাবনা দেখা গেলো, এবং এটাও বুঝা গেলো যে ৬ বোর্ডের কোনো এক বোর্ডের আওতাভুক্ত না হলে স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে না, তখন তিনি ঠিকই বেফাকের সাথে এসে যোগ দিলেন। আর এখনতো!
শেষ কথা, যেই লোকের ছাত্র জীবনে ছিলো “উস্তাদ বিরোধী আন্দোলন”র কালো দাগ যার ফলে নিজ জন্মভূমিতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটাও শেষ করার সুযোগ হয়নি। এমনকি নিজের নামটাও পরিবর্তন করতে হয়েছে, যেই লোক কিনা স্বীয় উস্তাদের আমানত আত্মসাৎ করে তা নিজের নামে করে নেয়, যেই লোক সবসময় নিজ ঘরানার উলামায়ে কেরামের সাথে একাত্ম হওয়ার পরিবর্তে তাদের থেকে দূরে দূরে থেকে তাদের যৌক্তিক কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা করে বেড়ান, নিজের লোকদের চেয়ে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের সাথেই যার ছিলো অধিকতর সু-সম্পর্ক, যে ছিলো সুযোগসন্ধানী, শুধুমাত্র নিজ স্বার্থ আদায়ে,
সেই লোকই যদি কিনা ক্বওমী ছাত্র-শিক্ষকদের অবিভাবক সংগঠনেরই “অবিভাবক” হিসেবে সামনে চলে আসে, তাহলে সেটা পুরো ক্বওমী অঙ্গনের জন্য ঠিক কতোটা সুখকর বিষয় হবে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।
তাই শুধু যোগ্যতাই নয়, বরং কারো ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তার অতীত কর্মকাণ্ড আর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ব্যাপারটাও যেনো হিসেবে রাখা হয় চাওয়া শুধু এতোটুকুই।।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সঠিক সিদ্ধান্ত ও তদানুরূপ আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)
বি.দ্র. এটা ছিলো এমনই এক ইতিহাস, যার উপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে গেছে। অথবা কোনো এক কারণে ইচ্ছাকৃতভাবেই তা চেপে রাখা হয়েছে। সুতরাং কারো যদি এ ব্যাপারে সন্দেহ হয় তাহলে অনুগ্রহপূর্বক ঘটনা সংশ্লিষ্ট লোকদের সাথে, অথবা তাদের পরিবারবর্গের সাথে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাইয়ের বিনীত নিবেদন রইলো।