হেফাজতী দুই প্রধান টার্গেটঃ
একঃ সরকারকে হেফাজতী ট্রাম্প কার্ডের শক্তি প্রদশর্ন!
দুইঃ টার্গেট দেশের নিরীহ তাবলীগ!
হেফাজতের অতীত ইতিহাস থেকে দেখা যায় তাদের যে কোন অন্যায় প্রয়োজনে সরকার বা দেশবাসীকে জিম্মি করা তাদের একটি স্বভাবজাত চরিত্রের অংশ। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর পতিত আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে সব থেকে বেশি সুবিধাভোগী জঙ্গি এই গোষ্ঠীটি। রাজনৈতিক দল না হয়েও দেশের যে কোন বিরোধীদল থেকেও, পতিত আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে সকল সুবিধা ভোগ করেছে এই হেফাজত। নতুন বিপ্লবী সরকারের কাছ থেকে একই সুবিধা নেওয়ার জন্য একটি বিশেষ কৌশলের অংশ হিসাবে আগামী ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে হঠাৎ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ডেকেছে এই চরমপন্থী জঙ্গি গোষ্টীটি!
ফিরে দেখা হেফাজত ও তাদের ষড়যন্ত্রঃ
এই সমাবেশের উদ্দেশ্য জানতে ও বুঝতে হলে এর পিছনের কতিপয় কারন জানা দরকার। পতিত আওয়ামী সরকারের দোসর এই হেফাজত না কোন রাজনৈতিক দল বা না এটি দাওয়াতে তাবলীগেরও কোন অংশ! তাহলে প্রশ্ন আসে কেন এরা দেশের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যাবহার হয় আর কেনই বা দাওয়াতে তাবলীগের মেহনতে এত বেশী নাক গলায়?
পতিত আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্য সরকারের পরামর্শে একটি শক্তিশালী জঙ্গি ট্রাম্প কার্ড হিসাবে গত ২০১৩ সালের ৫ মে থেকে ব্যাবহার হয়ে আসছে এই হেফাজত। ফলে রাতারাতি তেঁতুল হুজুর পরিনত হয় মুখরোচক মিষ্টি তেঁতুলে! গর্বে গদগদ হয়ে ডাইনী খুনী হাসিনাকে বানায় “কওমী জননী”!
গত ২০১৮ সালের পূর্বে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের কোন সরকারী সভাতে তাবলীগ ওয়ালাদের সংগে এই জঙ্গি হেফাজতকে একটি বারের জন্যও উপস্হিত হতে দেখা যায়নি। খেলাফত মজলিশ নেতা মাহফুজুল হক তার রাজনৈতিক প্রয়োজনে কখনও বা বিএনপি জোটে, আবার কখনও বা আওয়ামী জোটে মিশেছে, কিন্তু তাবলীগে তাদের কখনো দেখা যায়নি। ধর্মের দোহাই দেয়া এই খেলাফত মজলিশের সুচতুর খেলোয়াড় দুই ভাই মাহফুজুল হক বা মামুনুল হক, পতিত আওয়ামী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পরামর্শে ও দাওয়াতে খেলোয়াড়দের মতো জার্সি বদল করে গত ২০১৮ তে পাক পন্থী নকল তাবলীগ “আলমী শুরার” হয়ে তাবলীগের মাঠে ঢুকে পড়ে। পাকি অর্থে শুরু হয় মূলধারার নিরীহ তাবলীগের মাঠ দখল ও ভূয়া পাকিস্তানী “আলমী শুরার” তাবলীগকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্র! ২০১৮ সাল থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিভিন্ন বৈঠকে দেখা যায় তাদের প্রাধান্য! কোনঠাসা হয়ে পড়তে থাকে নিরীহ তাবলীগ!
কতিপয় নিকৃষ্ট বৈষম্যের শিকার হয় মূলধারার আসল তাবলীগঃ
(১) ১০০ শত বছরের ইতিহাসে এমনকি বিএনপি’র শেষ শাসন আমলেও দেখা যায়নি যে, বিএনপি সরকার তাবলীগ নিয়ন্ত্রন করছে। এমনকি জামাতে ইসলাম বিএনপি’র শরিক থাকাকালীনও এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। বিশ্ব তাবলীগ মারকাজের সদর দপ্তর নিজামুদ্দিন দিল্লির পরামর্শে কাকরাইল তাবলীগ মারকাজের সকল কার্যাবলী সম্পন্ন হতো। কিন্তু গত ২০১৮ থেকে “হেফাজত” তাবলীগে অনুপ্রবেশ করার পর থেকেই বৈষম্যের শিকার হতে থাকে মূলধারা তাবলীগ। পতিত আওয়ামী দোষর “হেফাজত” আওয়ামী সহায়তায় দখল নিতে শুরু করে আসল তাবলীগ ও আসল তাবলীগের গুরুত্বপূর্ণ স্হান সমূহ।
(২) এই বৈষম্যের বড় উদাহরনঃ তাবলীগের বাংলাদেশ সদর দপ্তর “কাকরাইল মারকাজ” দখল নেওয়া। যেখানে হেফাজত তথা পাক পন্থী তাবলীগ ২৮ দিন আর আসল তাবলীগদের দেওয়া হয় ১৪ দিন। কত বড় বৈষম্য! সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে আজ অবধি এই অন্যায় নিয়মেই চলছে কাকরাইল মারকাজ।
(৩) দ্বিতীয় বড় উদাহরনঃ হেফাজত তাবলীগে অনুপ্রবেশের পর থেকে গত ২০১৮ থেকেই হেফাজত তথা পাক পন্থী তাবলীগ “বিশ্ব ইজতেমার” প্রথম ধাপে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান নিজেদের দখলে রেখেছে। আর বৈষম্যে শিকার নিরীহ আসল তাবলীগ দের উপর জোর করে প্রতিবারই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ধাপ! ২০১৮ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিভিন্ন সভাতে অনুপ্রবেশকারী হেফাজতকে দেখা গেছে “Decision Maker” হিসাবে কাজ করতে!
(৪) ২০১৮ থেকে দেশের জেলা ও থানা পর্যায়ের আসল তাবলীগের মারকাজ দখল, মসজিদ থেকে জোর করে দেশি-বিদেশী জামাত বের করে দেওয়া, নিরীহ তাবলীগের সাথীদের খুন, জখম সহ নানাবিধ কাজে সরাসরি হেফাজত তাদের মাদরাসা ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে আসছে।
(৫) ২০১৮ থেকে তাদের প্রথম ধাপের ইজতেমাতে পাকিস্তান বা ভারত থেকে হেফাজত তথা পাক পন্থী তাবলীগের শীর্ষ নেতাদের আনলেও, দ্বিতীয় ধাপে আসল তাবলীগের শীর্ষ আমীর মাওলানা সাদ সাহেবকে অন্যায় ভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে!
কেন ২২ অক্টোবর তাবলীগের দুই পক্ষের সভা বাতিল করে সচিবালয়ে উপদেষ্টা মন্ডলীদের আইন–শৃঙ্খলা সভা করলেন?
হঠাৎ ২১ অক্টোবর জানিয়ে দেওয়া হয়, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে দুই পক্ষের সংগে ২২ অক্টোবর সরকার বসছে না। পরবর্তীতে তারিখ জানানো হবে। তবে সচিবালয়ে উপদেষ্টা মন্ডলীদের আইন-শৃঙ্খলা সভা নিয়মিত ভাবে শেষ হয়। যে সভাতে ধর্ম ও স্বরাষ্ট উপদেষ্টা বাদে অন্য সকল উপদেষ্টাগণ এই বিষয়ে একমত হন যে, “যেহেতু এই সরকার বৈষম্য বিরোধী সরকার, সেহেতু ২০১৮ থেকে বৈষম্যের শিকার আসল তাবলীগ ওয়ালারা আগামী ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা প্রথম ধাপে সম্পন্ন করবে এবং মাওলানা সাদ সাহেব আসতে পারবেন।”
এই বিষয়টি হেফাজতের নজরে আসায় তারা তাদের শক্তির জানান দিতে ৫ নভেম্বর মহাসমাবেশ ডাকে। মূলতঃ ৩ টি প্রধান বিষয় নিয়ে তাদের এই সম্মেলন। তাবলীগে অনুপ্রবেশকারীদের এই জাতীয় দাবীর কাছে বিপ্লবী সরকার কি হেরে যাবে? কি সেই তিন দাবীঃ
(১) বিশ্ব ইজতেমার মাঠ হেফাজত তথা পাক পন্থী তাবলীগের দখলে থাকবে।
(২) কাকরাইল মারকাজে ২৮ বা ১৪ দিন নিয়ম বাতিল হয়ে সম্পূর্ণ মারকাজ হেফাজত তথা পাক পন্থী তাবলীগের অধীনে থাকবে।
(৩) তাবলীগের বিশ্ব আমীর মাওলানা সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হবে।